নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী পাম অয়েলের বাজার পরিস্থিতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। একদিকে উৎপাদন সীমিত হয়ে আসা, এর বিপরীতে দেশে দেশে বাড়তি চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের মজুদ কমিয়ে দিয়েছে। বাড়িয়েছে দাম। শীত মৌসুম শুরু হয়ে গেলেও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্য বৃদ্ধির এ ধারা দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকতে পারে। এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছর পাম অয়েলের দাম বেড়ে বিগত নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খবর রয়টার্স ও স্টার অনলাইন। পাম অয়েলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ চালিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স। জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে সরবরাহ সংকট থেকে মালয়েশিয়ার বাজারে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ৩ হাজার ৮০০ রিঙ্গিতের (স্থানীয় মুদ্রা) বা ৯৪০ ডলারের কাছাকাছি উন্নীত হয়েছিল। গত এক দশকের মধ্যে এটাই পাম অয়েলের সর্বোচ্চ দাম। মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা চলতি বছরও বজায় থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২১ সাল শেষে মালয়েশিয়ার বাজারে প্রতি টন পাম অয়েলের গড় দাম ২ হাজার ৮০০ রিঙ্গিত বা ৬৯৪ ডলার ৯৬ সেন্টে দাঁড়াতে পারে বলে রয়টার্সের জরিপে উঠে এসেছে। ২০১২ সালের পর এটাই মালয়েশিয়ার বাজারে পাম অয়েলের সর্বোচ্চ গড় দামের রেকর্ড। গত বছর রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পরও প্রতি টন মালয়েশীয় পাম অয়েলের গড় দাম ছিল ২ হাজার ৬৮৫ রিঙ্গিত। মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকার বিষয়ে মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাস করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার ক্রিস্টোফার চাই বলেন, গত বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালটাও টালমাটাল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাবে পাম অয়েলের বাজার। করোনাকালীন সরবরাহ সংকট দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যমান থাকবে। বাড়তির পথে থাকতে পারে দাম। বছরজুড়ে প্রত্যাশার তুলনায়ও বাড়তি দামে বিক্রি হতে পারে পণ্যটি। পাম অয়েলের বাজারে টালমাটাল পরিস্থিতির পেছনে রয়টার্সের প্রতিবেদনে করোনকালীন উৎপাদন কমে আসাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে আবহাওয়াগত লা-নিনা পরিস্থিতি ভূমিকা রেখেছে। বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর সময় প্রতিকূল আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের উৎপাদনে পতন দেখা দিয়েছে। রফতানি সেই তুলনায় চাঙ্গা থাকায় সরবরাহ সংকট দাম বাড়িয়েছে পণ্যটির। তবে চলতি বছর মিশ্র প্রবণতা দেখা যেতে পারে পাম অয়েলের উৎপাদন খাতে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি ৮৩ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৯৬ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ কম। এ পরিস্থিতি বাড়তির পথে ধরে রাখবে পাম অয়েলের দাম। বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে গত ২৩ ডিসেম্বর ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ৩ হাজার ৮৫৪ রিঙ্গিতে (স্থানীয় মুদ্রা) উন্নীত হয়, যা ২৫ বছরের সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশটির বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল ৩ হাজার ৮০০ রিঙ্গিতের আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির এ ধারা চলতি বছরের প্রথম (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকজুড়ে বজায় থাকতে পারে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ড বা এমপিওবি। এ বিষয়ে এমপিওবি চেয়ারম্যান দাতুক জাযলান ইয়াকুব বলেন, শীত মৌসুমে পাম অয়েল জমে যায়। ফলে শীতে পণ্যটির রফতানি ও দাম দুটোই কম থাকে। এবার পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টো। শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণে শীতকালে রফতানি চাঙ্গা থাকায় মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের মজুদ ১৩ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কমে এসেছে। দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এ পরিস্থিতি দ্রুত না বদলালে কিংবা উৎপাদন বাড়ানো না গেলে মালয়েশীয় পাম অয়েলের দামে এমন চাঙ্গা ভাব আরো কিছুদিন বহাল থাকতে পারে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাত সিনাগা বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ও উৎপাদন স্বাভাবিক হয়ে আসার জের ধরে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হবে না। বণিক বার্তা / এস এইচ