খাজা টাওয়ারে আগুন: ইন্টারনেটে ধীরগতি থাকবে ১ সপ্তাহ

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ডাটা সেন্টার ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে গেছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি)। এতে সারাদেশের অন্তত ৬০০ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট সেবা। যেগুলো এখনও চালু আছে, সেখানেও ইন্টারনেটে ধীরগতি।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এমদাদুল হক বলেন, ‘যতটুকু খবর পেয়েছি লেভেল থ্রি, ম্যাক্স হাব, আমরা নেটওয়ার্কস, আর্থনেট ও উইনস্ট্রিম আইআইজি পুড়ে গেছে। ফলে আমরা এরই মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ হারিয়েছি। সারাদেশের ৫৫০-৬০০ আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সেবা বন্ধের পর্যায়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাজা টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় ধারণা অনুযায়ী- যে পরিমাণ ড্যামেজ (ক্ষতি) হয়েছে, তাতে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আর যদি ডিভাইসগুলো পুড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে আরও বেশি সময়ও লাগতে পারে। তার আগ পর্যন্ত সারাদেশে ইন্টারনেট ধীরগতির থাকতে পারে।’

আইএসপিএবির মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা বলেন, ‘সারাদেশে ৬-৭টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এগুলোতে আবার অন্তত ৬০০-৭০০ আইএসপির ডাটা রাখা থাকে। কোনো আইআইজি শাটডাউন করলে, সেখানে যাদের ডাটা থাকে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সেখানে ঢুকতে পারলে পরিস্থিতি দেখে ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে। যদি ডিভাইসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা পুড়ে না যায়, সে ক্ষেত্রে দ্রুত আগের অবস্থায় ফেরা যাবে। আর যদি ডিভাইস পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ নয়, তারও বেশি সময় লাগতে পারে।’

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠান শূন্য ইন্টারনেটের ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আর্থের (আইএসপি প্রতিষ্ঠান) থেকে আমার ফেসবুক, ইউটিউব নেওয়া। ওদের সার্ভিস পাচ্ছি না। ফলে আমার ইউটিউব, ফেসবুক ডাউন। এখন আমার গ্রাহকরাও ইউটিউবে ঢুকলে ডাউন পাবেন। ঠিক ভাবে ভিডিও দেখতে পারবেন না। ফেসবুক চালাতেও সমস্যায় পড়ছেন। ভার্গো থেকেও আমার কিছু ডাটা নেওয়া আছে। ওটাও ডাউন।’

তিনি বলেন, ‘আমি যাদের থেকে ইন্টারনেটটা নিয়েছি, সেটা ঠিক আছে। এ জন্য আমার গ্রাহকরা ইন্টারনেট সার্ভিসটা ঠিকমতো পাচ্ছে। অর্থাৎ খাজা টাওয়ারের আইআইজির পপ প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যাদের ডাটা সার্ভার ডাউন; তাদের থেকে ডাটা নেওয়া সংযোগ ব্যবসায়ীদেরও সার্ভার ডাউন। এটা সারাদেশে অসংখ্য প্রোভাইডারের একই অবস্থা।’

মহাখালীর খাজা টাওয়ারে ইন্টারকানেক্ট এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) রয়েছে। ফলে দেশের সব মোবাইল অপারেটরদের সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না।

বিশেষ করে এক অপারেটর প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য অপারেটরে কল দিতে গেলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একাধিকবার ডায়াল করার পর কল ঢুকছে। নিরবচ্ছিন্ন কল করার সুবিধা ও ইন্টারেনট সেবা পাচ্ছেন না মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও।

নেটওয়ার্ক বিভ্রাট ও তা সমাধানে চেষ্টার কথা জানিয়ে গ্রাহকদের এসএমএস দিচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলো। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজেও সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

বাংলালিংক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইন্টারকানেক্ট এক্সচেঞ্জ সিস্টেমে বিঘ্ন হওয়ায় বাংলা‌লিংক থে‌কে অন্য অপারেটরে কল করতে কিছু গ্রাহকের সমস্যা হচ্ছে। সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাময়িক এ সমস্যার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ একই রকম বার্তা দিয়েছে গ্রামীণফোন ও রবি।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে মহাখালীর আমতলী মোড়ের কাছের ১৪তলা বিশিষ্ট খাজা টাওয়ারে আগুন লাগে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে পর্যায়ক্রমে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট। এছাড়া ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া সাত প্লাটুন আনসার সদস্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। এরপর প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।