ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের অর্ধেকের বেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার বা সাইট অচল হয়ে আছে। মোবাইল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি বিটিসিএল এবং আইএসপির গ্রাহকরা মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার তথ্য দিয়ে প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) জানিয়েছে, সারাদেশে মোট ৫৮ হাজার ২৯৮টি মোবাইল অপারেটরের টাওয়ারের মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৬টি টাওয়ার অচল হয়ে আছে। যা শতকরা হিসাবে ৫৬ শতাংশ।
বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় সবক্ষেত্রেই সাইট অচল হয়ে যাওয়ার কারণ হলো দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা। মোবাইল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বিটিআরসিতে আইএসপি অপারেটর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, উপকূলীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় তিন লাখ আই স্পিকার ফিক্সড ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উপকূল এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়া, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ঘূর্ণিঝড়ে ইন্টারনেট ক্যাবলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর ১০০ ও বেশি আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব জেলায় আইএসপি অপারেটরদের ৩২০টি পপের মধ্যে ২৫০টি অকার্যকর রয়েছে। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সেসব জেলায় বিভিন্ন আইএসপি পপ পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে সেবা প্রধানের চেষ্টা করছে।
এছাড়াও, ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ১৯টি, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডের ২৯৬টি, ফাইবার এট হোমের ২৪টি সাইট অচল আছে।
এদিকে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, অপর্যাপ্ত ও মানহীন বিটিএস দিয়ে চলছে দেশের টেলিযোগাযোগ সেবা। এর ফলে বিদ্যুৎ গেলেই থাকে না নেটওয়ার্ক। এতে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবায় গ্রাহকের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ালেও মানহীন সেবা গ্রাহক ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আর এ জন্য দায়ী অপর্যাপ্ত টাওয়ার, মানহীন মাইক্রোওয়েভ, মানহীন ব্যাটারি, ওভার হেড ফাইবার ও জেনারেটর না থাকা।
তিনি বলেন, দেশে সক্রিয় সিমধারী গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি ২৬ লাখ অথচ এর বিপরীতে যেখানে টাওয়ার থাকার কথা প্রায় লক্ষাধিক সেখানে আছে ৪৫ হাজার ২৩১টি। এর মধ্যে রবির দুই হাজার ২৯৬, গ্রামীণফোনের ১২ হাজার ৫২৬, বাংলালিংকের চার হাজার ছয়টি, টেলিটকের ৬২১ এবং এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ৮৬০, ইডটকো লিমিটেডের ১৬ হাজার ৬৮৩, সামিট চার হাজার ৩৮৮ ও কীর্তনখোলা ৬২১ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলের ৫১৪টি।
আবার ২০১৮ সালে বিটিআরসি বেসরকারি চারটি টাওয়ারকো কোম্পানির লাইসেন্স দিয়ে যে নীতিমালা তৈরি করেছে। সেখানে বলা রয়েছে, মোবাইল অপারেটর নতুন করে আর টাওয়ার তৈরি করতে পারবে না। অর্থাৎ টাওয়ারকো কোম্পানি থেকে তাদের অর্থের বিনিময়ে সার্ভিস নিতে হবে। এই টাওয়ার কোম্পানিগুলো মূলত মোবাইল অপারেটর থেকে টাওয়ারগুলো কিনেছে। এই টাওয়ারগুলোর মাইক্রোওয়েভ মানসম্মত নয়, সেই সঙ্গে ব্যাটারিগুলো মানহীন হয়ে পড়েছে। যেখানে ছয় ঘণ্টা পাওয়ার ব্যাক দেওয়ার কথা সেখানে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেটওয়ার্ক অচল হওয়ার কারণ কি?
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির কাছে আমাদের অনুরোধ, মাইক্রোওয়েভের মান এবং ব্যাটারি ধরণ পর্যবেক্ষণ করা। সেই সঙ্গে দেশের ফাইবার অপটিক্যাল এখনো ৬৫ শতাংশ ওভারহেড থাকায় ঝড়-বৃষ্টি এলেই কেটে যাচ্ছে ফাইবার ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে নেটওয়ার্ক। বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করার জন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট মহল উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আমরা মনে করি।