ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ১০ বছরেও শেষ হয়নি বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের যোগাযোগ সহজ ও সময় সাশ্রয়ী করতে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। চার বছর মেয়াদান্তে কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে খরচও।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। নতুন করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ফলে হাতে সময় বাকি আছে মাত্র তিন মাস। অথচ এ রুটে চলাচলের বাস এখনো কেনা হয়নি। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে তৃতীয় ধাপে আরও ছয় মাস মেয়াদ বাড়ছে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে।
পুরো কাজ শেষ হতে আগামী বছর মার্চ মাস লেগে যেতে পারে। এরপর বাস চলাচলের জন্য আরও তিন মাস সময় লাগতে পারে। ফলে ২০২৩ সালের জুনে চালু হতে পারে বলে জানান বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর বলাকা ভবনে থেকে বাস র্যাপিড ট্রানজিটের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ২২৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং মেয়াদ বেড়েছে ছয় বছর। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ২ হাজার ৮৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
বিআরটির এমডি শফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের দুটো দল চীন থেকে এসেছে। তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন। তাদের কাছে আমাদের মূল তিনটা চাওয়া। ফান্ডের যে ঘাটতি এটা পূরণ করতে হবে। লোকবলের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারা সব বিষয়ে একমত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৯ শতাংশের মতো। হাতে যে চার মাস সময় বাকি আছে তাতে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। তার ওপর উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনার জেরে গত কয়েকদিন ধরে কাজ বন্ধ। ওই রুটে যে ৫০টি বাস চলাচল করবে সেগুলো কেনার পরিকল্পনাও এখনো চূড়ান্ত নয়। কবে নাগাদ বাসগুলো কেনা হবে, কোন দেশ থেকে কেনা হবে তারও কোনো সুরাহা হয়নি। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনার কথা। আন্তর্জাতিক টেন্ডারে কেনাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ জন্যই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লো ছয় মাস।
এ দশ বছরে একাধিক দুর্ঘটনায় এ প্রকল্প কেড়েছে ছয় প্রাণ। চীনা নাগরিকসহ আহত হন আরও ৯ জন। আর ২০ কিলোমিটার (নিচ ও উড়ালসহ) রাস্তা তৈরি করতে ধুলাবালি, যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ তো নিত্যসঙ্গী।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পে সড়ক হবে ২০ দশমিক ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভূমিতে থাকবে ১৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উড়াল সড়ক হবে সাড়ে চার কিলোমিটার, যা নির্মাণের অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
টঙ্গীতে ১০ লেন ব্রিজ তৈরি হচ্ছে, এর অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৭০ শতাংশ। ছয়টি ফ্লাইওভার হচ্ছে, যেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৮১২ দশমিক ৫০ মিটার।
এর মধ্যে বিমানবন্দর ফ্লাইওভার ৮১৫ মিটার, জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার, কুনিয়া ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ভোগড়া ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার ও জয়দেবপুর ফ্লাইওভার ২ হাজার ১৪ মিটার। এ ছয় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
গাজীপুরে একটি বাস ডিপো থাকছে, যার কাজ শতভাগ সম্পন্ন। রুটে মোট স্টেশন ২৫টি। থাকছে ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ১১৩টি অ্যাকসেস রোড। প্রকল্পের আওতায় ২৪ কিলোমিটার হাই-ক্যাপাসিটি ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান, যার অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ১০ শতাংশ। রুটের মোড়গুলোতে ট্রাফিক লাইট এবং ১৫০টি ক্লোজড-সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় তুরাগ নদীর ওপর ১০ লেনবিশিষ্ট টঙ্গী ব্রিজ এবং ছয়টি এলিভেটেড স্টেশনসহ সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড সেকশন নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে গাজীপুরে বিটিসিএলের জমিতে বিআরটি ডিপো, ১০টি কিচেন মার্কেট ও বিআরটি করিডোরের উভয়পাশে ১৪১টি অ্যাকসেস রোডের উন্নয়নকাজ চলছে।
এছাড়া গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্রস্তাবিত করিডোর বরাবর এক হাজার জ্বালানি সাশ্রয়ী সড়কবাতি স্থাপন কাজও চলমান।