গণপরিবহণ সংকট, পকেট কাটছে সিএনজি ও বাইকাররা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন রমিজ ইসলাম। শনির আখড়া থেকে ধানমন্ডি যাওয়ার জন্য সকাল ৯টা থেকে উবার অ্যাপে বাইক সার্চ করেছেন অন্তত ২০ বার। কিন্তু বাইক পাননি। 

কন্ট্রাক্টে যেতে গিয়ে দেখেন অ্যাপে যেখানে ভাড়া দেখাচ্ছিল ২১৬ টাকা, সেখানে কন্ট্রাক্টে তার কাছে চাওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। তবে শেষ পর্যন্ত অ্যাপে বাইক পান তিনি।  

রফিকুল ইসলাম বলেন, ধানমন্ডি-১৫ তে যাওয়ার জন্য সকাল থেকে বাইক সার্চ করে যাচ্ছি, কিন্তু পাচ্ছি না। কন্ট্রাক্টে গেলে বাইক চালকরা অনেক বেশি ভাড়া চায়। অবশ্য তাদেরও বা দোষ দেই কী করে, গতকাল রাতে হঠাৎ তেলের দাম বাড়লেও অ্যাপগুলোতে আগের ভাড়া বহাল আছে। 

গণ মাধ্যমকর্মী রাসেলুজ্জামান বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে বাড্ডা লিঙ্ক রোডের ভাড়া ছিল ২৫০-২৮০ টাকা। কিন্তু আজ ৫০০ টাকা চেয়ে বসে আছে। বাইকেও একই দাম চাওয়া হচ্ছে। অ্যাপে ভাড়া কম দেখালেও তারা তা মানতে নারাজ।

শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এরপর আজ শনিবার সকাল থেকে রাজধানীতে দেখা দিয়েছে তীব্র গণপরিবহন সংকট। গণপরিবহন সংকটের পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোতেও চলছে এক রকমের হাহাকার। 

অনেক যাত্রীই অ্যাপে বাইক না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। শহীদুল ইসলাম নামে একজন জানান, অ্যাপে ভাড়া ২৬০ টাকা এলেও কন্ট্র্যাক্টে তার কাছে ৪০০ টাকা চাচ্ছেন চালকরা।   

বাইক চালক সুমন দাস বলেন, অ্যাপ তাদের ভাড়া পরিবর্তযণ করেনি। আগের ভাড়াতেই রয়েছে কিন্তু তেলের দামতো আর আগের জায়গাতে নেই। এজন্য বিকল্প হিসেবে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতে হচ্ছে। এখান (শনির আখড়া) থেকে গুলিস্তান অ্যাপে দেখাচ্ছে ৫০ টাকা, কন্ট্রাক্টে যাচ্ছি ১০০ টাকায়, তাহলে আমি অ্যাপ ব্যবহার করব কেন?

সিএনজি চালক আকমল শেখ বলেন,  বাসাবো থেকে পিজি হাসপাতাল যেতে আগে ২০০-২৫০ টাকা দিতের যাত্রীরা। এখন ৩০০ টাকা চাচ্ছি। তার গাড়ি সিএনজিতে চলছে এমন প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, আমাদেরওতো চলতে হবে।

মধ্যরাত থেকে জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হলেও রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোতে আগের নিয়মেই ভাড়া নির্ধারিত হচ্ছে। এ নিয়ে অসন্তুষ্ট রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরা।    

ভাড়া বেশি চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উবার চালক ইয়াসিন মোল্লা বলেন, অ্যাপে আগের ভাড়াই দেখাচ্ছে। কিন্তু তেলের দাম তো বেড়েছে। ২৬০ টাকার মধ্যে ১০০ টাকার বেশি যাবে তেল খরচ, এরপর কোম্পানিকে ২৫% হিসেবে দিতে হবে ৬৫ টাকা। আমার আর টাকা থাকবে কই! 

তিনি আরও বলেন, তেলের দাম বাড়লেও অ্যাপে সার্চ করলে আগের ভাড়াই দেখাচ্ছে। এ কারণে আজ সকাল থেকে অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছে অনেকে। ১০০ বার সার্চ করেও বাইক পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই কন্ট্রাক্টে যাচ্ছে। যদি আগের ভাড়া বহাল থাকে তাহলে বাইক চালকরা অ্যাপে যেতে পারবে না। 

গত রাত ১২টার পর জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশ নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করছে। ভারত গত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে।