ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: জনাকীর্ণ শহর রাজধানী ঢাকা। দিন দিন বাড়ছে মানুষ। তাদের চলাচলের জন্য যেমন-তেমনভাবে বাড়ছে গণপরিবহন। নেই কোনো শৃঙ্খলা। গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা দূর করতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একটি রুট নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর চালু হয় ঢাকা নগর পরিবহন। চলতি বছরের মধ্যেই এ ব্যবস্থায় আরও তিনটি নতুন রুট চালু হচ্ছে।
ঢাকা নগর পরিবহন চালুর পর এ উদ্যোগ যেমন প্রশংসা পেয়েছে তেমনি নানা বিষয়ে আছে সমালোচনাও। এর পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে কার্যক্রমটি মনিটরিংয়ের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সে লক্ষ্যে অ্যাপ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অ্যাপটির মাধ্যমে সেবা মনিটরিংয়ের কার্যক্রম চলবে। পুরো কাজ শেষ হলে অ্যাপের মাধ্যমে কোন কাউন্টারে কয়টি টিকিট বিক্রি হলো, বাসটি কোথায় অবস্থান করছে, বাসে কতজন যাত্রী আছে, কাউন্টার ধরে ধরে আলাদাভাবে সব তথ্য জানতে পারবে নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ফলে কোন কাউন্টারে চাপ বেশি, কোথায় যাত্রী কম, কোন বাস কোথায় অবস্থান করছে— এসব তথ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেলে যাত্রীসেবার মান বাড়ানো যাবে। এছাড়া যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে অফিসে বসেই সিদ্ধান্ত জানানো যাবে।
জানা গেছে, অ্যাপটি নিয়ে কাজ করছে বাস রুট রেশনালাইজেশনের অন্যতম সহযোগী ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। অ্যাপটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘যাত্রী বাস ওনার’। এতে থাকবে নয়টি ক্যাটাগরি। ক্যাটাগরির সবকটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ক্যাটাগরি ইতোমধ্যে পরিচালনা করে নগর পরিবহনের সর্বশেষ তথ্য জানতে পারছে ডিটিসিএ।
নয় ক্যাটাগরির মধ্যে থাকছে- ভেইকেলস, কোম্পানি, রাইড, টিকিটিস, ট্র্যাকিং, সামারি, কাউন্টার, ওয়াইজ রিপোর্ট, সুপারভাইজার ও ওয়ে বিল। এগুলো ঢাকা নগর পরিবহন অ্যাডমিন প্যানেল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব নীলিমা আকতার এ বিষয়ে বলেন, অ্যাপটির মাধ্যমে আমরা নিজেরা বুঝতে পারি কোন কাউন্টারে কত টিকিট বিক্রি হচ্ছে। বাসগুলোর অবস্থান কোথায়। এক কথায় অ্যাপটির মাধ্যমে সার্বিক বিষয়ের তথ্য পাওয়া সম্ভব। ফলে সেবার মান বাড়বে।
এছাড়া অ্যাডমিন প্যানেল থেকে যেকোনো স্থানে বসে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। অ্যাপটির কয়েকটি ক্যাটাগরি আমরা বর্তমানে ব্যবহার করতে পারছি, বাকিগুলোর কাজ চলছে। সব কাজ শেষ হলে সার্বিক মনিটরিং জোরদার করা যাবে— বলেন নীলিমা আকতার।
বর্তমানে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় ঢাকা নগর পরিবহনের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুট চালু আছে। এটি প্রথম ২১ নম্বর যাত্রাপথ, সবুজ গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত। এর আওতায় ২২, ২৩ ও ২৬ নম্বর যাত্রাপথ নতুন করে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় আরও তিনটি রুট চালু হতে যাচ্ছে চলতি বছরেই।
নতুন তিনটি যাত্রাপথ হলো- ঘাটারচর থেকে ফার্মগেট হয়ে ভুলতা পর্যন্ত, দ্বিতীয় রুট ঘাটারচর থেকে বসিলা, সাইন্স ল্যাবরেটরি হয়ে মেঘনা ঘাট এবং তৃতীয় রুটটি হলো- ঘাটারচর থেকে কাকরাইল হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগে ঢাকা নগর পরিবহন কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে বিআরটিসির ৩০টি বাস এবং ট্রান্স সিলভার ২০টি বাস যাত্রা শুরু করে। এ রুটে মোট ১০০টি বাস চলাচলের কথা রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক বাসের বিশৃঙ্খলা দূর করতে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি এ সংক্রান্ত ১১টি সভা করেন। এরপর নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস কমিটির দায়িত্ব পান। তার নেতৃত্বে বর্তমানে চলছে বাস রুট রেশনালাইজেশনের কার্যক্রম।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি রাজধানীতে গণপরিবহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করতে গঠন করা হয় বাস রুট রেশনালাইজেশন সংক্রান্ত কমিটি। প্রথম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চক্রাকার বাস নামানো, নতুন রুট নির্ধারণ, বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজিং, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের স্থান নির্ধারণসহ বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জানা গেছে, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল হিসেবে ঢাকা মহানগরীর শহরতলীর চারটি স্থান প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। স্থানগুলো হচ্ছে- বিরুলিয়ার বাটুলিয়া, সাভারের হেমায়েতপুর, কামরাঙ্গীরচরের তেঘরিয়া ও কাঁচপুর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই ধাপে এ বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হবে।