ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: করোনা মহামারি শুরুর আগে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী উড়োজাহাজের টিকিটের দাম ছিল গড়ে ৫০ হাজার টাকা। এখন তা দ্বিগুণ বেড়ে লাখ টাকার ওপরে চলে গেছে। বিমানের টিকিটের চড়া দামে ভোগান্তিতে পড়েছেন অভিবাসী কর্মীরা, বিপাকে পড়েছেন জনশক্তি রফতানিকারকরাও। এর পেছনে দায়ী সিন্ডিকেট।
বুধবার জনশক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় এসব কথা বলেন জনশক্তি রফতানিকারকরা।
তারা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিমান টিকেটের মতোই, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়াকেও কুক্ষীগত করতে চাইছে সিন্ডিকেট চক্র। গত ১৯ ডিসেম্বর, মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। শিগগিরই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওরস-এসওপি প্রণয়নের কথা রয়েছে।
এফবিসিসিআই’র স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফারুক অভিযোগ করেন, বিগত সময়েও মালয়েশিয়াতে জনশক্তি পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। ওইসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি-অনিয়মের কারণেই একপর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। এখন ওই একই চক্র ২৫টি কোম্পানির মাধ্যমে দেশটিতে অভিবাসী কর্মী পাঠানোর অপকৌশল করছে।
সভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্য সদস্যরাও জনশক্তি খাতে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। নেপাল, ভারত, ও পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে তারা জানান, প্রতিটি দেশেই দেড় হাজারেরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্ট মালয়েশিয়াতে জনশক্তি রফতানি করছে। বাংলাদেশে এ সুবিধা গুটিকয়েক এজেন্টের হাতে রাখার তীব্র বিরোধিতা করেন তারা।
এ খাতে সিন্ডিকেট ভাঙতে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এফবিসিসিআই মনোনীত সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান জনশক্তি রফতানিকারকরা। এছাড়াও মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন সংশোধন, রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে প্রণোদনার হার ৩ শতাংশ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
জনশক্তি রফতানিখাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনশক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি।
মহামারির মন্দা মোকাবিলায় জনশক্তি খাতকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার সুপারিশ করেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি ও জনশক্তি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ মো. হাবীব উল্লাহ ডন।
তিনি জানান, দেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে জনশক্তি খাত। তাই এ খাতটির ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে বাড়তি মনোযোগ আহ্বান করেন তিনি। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে অবদান রাখা জনশক্তি রফতানিকারকদের সরকারিভাবে সম্মানিত করার উদ্যোগ নেওয়ারও তাগিদ দেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান রিয়াজ-উল-ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মাহমুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুস্তাফা (বাবুল), বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মেদ সেরাজ মিয়া, মফিজ উদ্দিন, মো. রেদওয়ান খান (বোরহান) ও কাজী এম. এ. কাশেমসহ অন্যান্য সদস্যরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আমজাদ হোসাইন ও মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।