ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সিলেটের পরিবহন শ্রমিক নেতাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ডাকা অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
সে সময় নগরের বিভিন্ন প্রবেশ পয়েন্ট অবরোধ করে রেখছিল পরিবহন শ্রমিকরা। পরে রাত পৌণে ১১টার দিকে শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) সুদ্বীপ দাস বলেন, রাতে দক্ষিণ সুরমার বাস টার্মিনাল এলাকায় পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকের পর তারা অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সিলেট থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়নি।
এর আগে সন্ধ্যায় সিলেট নগরের সবগুলো প্রবেশদ্বারসহ দক্ষিণ সুরমার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ চত্বর, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, নগরের টিলাগড় পয়েন্ট, কিনব্রিজ, মদিনা মার্কেট, তেমখি, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, শাহজালাল উপশহর, নয়াসড়কসহ সবকটি পয়েন্টে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা ট্রাক আড়াআড়ি ভাবে রেখে ব্যারিকেড দিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা মামলা প্রত্যাহার ও মহানগর পুলিশের কমিশনারের অপসারণের দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন শ্রমিকরা।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ সুরমা থানায় শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মারপিট ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন লেগুনা শ্রমিক মো. শাহাব উদ্দিন। এতে আসামি করা হয় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ, হিউম্যান হুলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল মিয়া মইনসহ চার শ্রমিক নেতাকে।
এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। এর নয় দিন আগে ৫ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করেন পরিবহন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, আমাদের নামে মামলা হয়েছে জেনে কিছু শ্রমিক নেতা এসএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। যা আমাদের শ্রমিকরা মেনে নেয়নি। তারা বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। মামলা প্রত্যাহার ও এসএমপি কমিশনারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে যানবাহন বন্ধ রেখে সিলেট নগরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা। ফলে সন্ধ্যা থেকে দূরপাল্লার বাসসহ সিলেটে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আচমকা এমন কর্মসূচিতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। অনেকেই বাসের কাউন্টারগুলোতে এসে বসে থাকতে দেখা যায়।
দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ সূত্র জানায়, পরিবহন শ্রমিকদের দুটি গ্রুপ রয়েছে। দুই গ্রুপের বিরোধের জেরে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ বলেন, নেতাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে আমরা রাজপথে কর্মবিরতি পালন করছি। যতক্ষণ না এই মামলা প্রত্যাহার হবে ততক্ষণ আমরা রাজপথে অবস্থান করবো।
দুই দিনের ছুটির কারণে বৃহস্পতিবার মানুষের বাড়ি ঘরে যাওয়ার কথা। শ্রমিকদের অবরোধের জন্য মুমূর্ষু রোগী নিয়ে যেতে পারেনি অনেকে। কিন্তু মামলার এতদিন পর হঠাৎ করে আজকের দিনটি কেন বেছে নেওয়া হলো।
সাধারণ মানুষরা বলছেন, পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলন অযৌক্তিক।