ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিকরণ, বিশেষ সুবিধাদি প্রদান ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৬টি আন্তঃনগর ট্রেনে লাগেজভ্যান সংযুক্ত করা হয়েছে। রোববার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ফিতা কেটে লাগেজভ্যান উদ্বোধন করেন এবং সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেন ছাড়ার অনুমতি দেন।
পরে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (৭১৮) ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের নতুন নন-রেফ্রিজারেটর লাগেজ ভ্যানে (৩৬০৫) চার হাজার ৬০০ কেজি মালামাল বুকিং নেওয়া হয়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেনে এ মালামাল পরিবহন বাবদ রেলওয়ে আয় করেছে ১০ হাজার ২১২ টাকা। এই পথে কেজিপ্রতি পরিবহন খরচ দুই টাকা ২২ পয়সা ধরা হয়েছে।
উদ্বোধনের আগে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে সবুজ শাক-সবজি, মৌসুমি ফল, ফুল, অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য (মাছ, মাংস, দুধ), ঔষধ ও ভ্যাকসিন রেলযোগে পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে লাগেজ ভ্যান ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে (যেখানে প্রচুর শাক-সবজি, মৌসুমি ফল, ফুল এবং অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য যেমন- মাছ, মাংস, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি উৎপাদিত হয়) নির্ধারিত আন্তঃনগর ট্রেনের মাধ্যমে লাগেজ ভ্যান যুক্ত করা হবে। এর মাধ্যমে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত দ্রব্য সহজে বাজারজাত করতে পারবেন এবং আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা দেশের শহরগুলোতে কৃষিজাত পণ্যগুলো সহজে সরবরাহ করতে পারবেন। ফলে দ্রব্য সহজলভ্য হবে এবং ন্যায্যমূল্যে পাওয়া যাবে। এ ট্রেন চালু হলে রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে, যা সার্বিক ভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার লক্ষ্যে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১২৫টি লাগেজ ভ্যান (৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ) সহ আরও অন্যান্য রোলিং স্টক (৪০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ, ৫৮০টি মিটারগেজ ওয়াগন ও ৪২০টি ব্রডগেজ ওয়াগন) সংগ্রহের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ২০১৮ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়। পরে ওই বছর জুলাই মাসে ৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজভ্যান সংগ্রহের জন্য দুটি দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ও চীনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট পৃথক দুটি চুক্তি হয়। মোট চুক্তি মূল্য ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা (৭৫টি মিটারগেজ লাগেজভ্যানের চুক্তি মূল্য ১৮৩ কোটি ২৪ লাখ এবং ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যানের চুক্তি মূল্য ১৭৫ কোটি ১৫ লাখ)।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) বরাবর একটি প্রস্তাবনা চিঠিতে চট্টগ্রাম–সিলেট এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত বিজয় এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রামের রুটের মহানগর এক্সপ্রেস ও চট্টলা এক্সপ্রেস, ঢাকা–সিলেট-ঢাকা রুটের জয়ন্তিকা ও উপবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের পারাবত এক্সপ্রেসসহ ১৬টি ট্রেনে নতুন লাগেজভ্যান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।