রইস উদ্দিন সরকার: নাটোরে আসন্ন ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ সংরক্ষণ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া মোকাম নাটোর শহরের চক বৈদ্যনাথ এলাকায়। জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ পরিচালিত এই মোকামে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টি চামড়া আড়ত রয়েছে এবং এখানে ব্যবসায়ী সংখ্যা প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ জন। দেশের এই বৃহত্তম চামড়া মোকামের ব্যবসায়ীরা হতাশায় ভুগছেন এবং আসন্ন ঈদ মৌসুমে মূলত তিনটি কারণে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
প্রথমত মূলধন সংকট: প্রান্তিক পর্যায়ের এসকল চামড়া ব্যবসায়ীর গত বছরের বিক্রয়কৃত চামড়ার ৮০ শতাংশ মূল্য ট্যানারী মালিকদের নিকট বকেয়া রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা। সরকার চামড়া শিল্পের জন্য ৩০০ কোটি টাকা ঋণ ঘোষণা করলেও প্রান্তিক পর্যায়ের এসকল ব্যসায়ীরা এই ঋণ সুবিধার বাহিরে রয়ে গেছে। তাদেরকে কখনই চামড়া ব্যবসার উপরে কোন প্রকার ঋণ প্রদান করা হয় না। ঈদের পূর্বে বকেয়া পরিশোধ এবং প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা প্রদান করা না হলে মূলধন সংকটের কারণে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ব্যহত হবে।
দ্বিতীয়ত লবণের উচ্চমূল্য: বর্তমানে লবণের মূল্য যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এই মূল্য হার বহাল থাকলে এবং এঅবস্থায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করলে ব্যবসায়ীদের লোকসানে পরতে হবে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন এক থেকে দেড় মাস পূর্বে যে লবণের মূল্য ছিল ৭০ কেজির এক বস্তা ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা তা এখন ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন বলণের মূল্য পূর্বের অবস্থায় আনা না গেলে অথবা টিসিবি’র মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে তারা কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে আগ্ৰহ হারিয়ে ফেলবেন।
চামড়ার বিদেশি ক্রেতা (বায়ার) সংকট: পরিবেশগত সম্মতি (compliance) না থাকায় বিদেশী ক্রেতারা (বায়ার) বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির ক্রেতারা বাংলাদেশের ট্যানারী হতে চামড়া ক্রয় প্রায় বন্ধ রেখেছে। ফলে একমাত্র চীন ছাড়া কোন দেশেই চামড়া রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। একমাত্র দেশ ক্রেতা হওয়ায় চামড়ার যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় এবং ব্লু ওয়েট চামড়া রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় টেনারী শিল্পগুলোও মূলধন সংকটে ভুগছে। ফলে তারা প্রন্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মূলধন সংকটের কারণে সংগ্রহ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় দিন দিন কাঁচা চামড়ার মূল্যও হ্রাস পাচ্ছে। ফলে একদিকে জাতীয় সম্পদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে অপরদিকে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সুপারিশ:
১) দ্রুত (কোরবানির পূর্বেই) ঋণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ট্যানারী গুলির আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করে প্রান্তিক পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করা । সেই সাথে প্রান্তিক পর্যায়ে চামড়া ব্যবসার উপরে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা।
২) লবণের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে অর্থাৎ পূর্বের মূল্যে ফিরিয়ে আনা অথবা টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
৩) চামড়া শিল্পের পরিবেশগত উন্নয়নের মাধ্যমে বিদেশি ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে চামড়া রপ্তানির প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা এবং ব্লু ওয়েট চামড়া রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা।
৪) সরকারিভাবে কাঁচা চামড়ার যুক্তিসংগত মূল্য নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নে যথাযথ মনিটরিং করা।